দক্ষিনদিনাজপুর

অভাবের সংসারে কোনও টিউশন ছাড়াই অসাধারন রেজাল্টে মুখ উজ্জ্বল করল রবি

বাবা পেশায় একজন সামান্য ভাজা বিক্রেতা। আর এই অভাবের সংসারে কোনও টিউশন ছাড়াই ছেলে নিজের চেষ্টায় মাধ্যমিক পরীক্ষায় অসাধারন রেজাল্ট করে তাক লাগালো বালুরঘাট ললিত মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রবি সরকার। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৩। ৯৬ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে রবি সরকার। বাংলায় ৯২, ইংরেজীতে ৯২, অংক ১০০, ফিজিক্যাল সায়েন্সে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৭,  ভুগোলে ৯৬ নম্বর পেয়ে মোট ৬৭৩ তুলে তাক লাগিয়ে দিল রবি সরকার।

বালুরঘাট শহরের আত্রেয়ী কলোনী পাড়ার বাসিন্দা পরান সরকার পেশায় একজন ভাজা বিক্রেতা। রাস্তা ঘাটে ঠেলায় করে বাদাম - বুট ভাজা থেকে মুড়ি মশলা বিক্রি করে সংসার চালান। পরান সরকারের তিন মেয়ে ও এক ছেলে। রবিই বাড়ির একমাত্র ছেলে। সংসারের হাল ধরতে রবির মা টুলটুল দেবী পরের বাড়িতে দুবেলা রান্নার কাজ করেন। অভাবের সংসারের মধ্যেও ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি রবির প্রবল আগ্রহ ছিল। আত্রেয়ী কলোনীর ঘুপচি একপ্রস্ত টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে দিন রাত এক করে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে এই তরুণ। প্রচন্ড অভাব থাকার দরুন কোন টিউশন ছিল না রবির। স্কুলের শিক্ষকদের পাশাপাশি, বাড়িতে থাকা কলেজ পড়ুয়া তার দিদির কাছ থেকে মাধ্যমিকের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছিল রবি। গত বারের বন্যায় আত্রেয়ী নদীর জল ঘরে ঢুকে সব তছনছ করে দিলেও কোন রকমে নিজের পড়াশোনার বই খাতাপত্র বাঁচিয়ে বাধের উপর আশ্রয় নিয়েছিল পরিবারের সাথে। তার পড়াশোনার আগ্রহই তাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। পড়াশোনা ছাড়াও রবি ভালবাসে গল্পের বই পড়তে। তাঁর স্কুলের লাইব্রেরী থেকে গল্পের বই সংগ্রহ করে পড়তে ভালবাসে রবি। তবে পড়ার পাশাপাশি টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখা তার শখ। 

তার এই সাফল্য নিয়ে বলতে গিয়ে রবি সরকার জানায়, ৭০০ -র মধ্যে সে ৬৭৩ পেয়েছে। তবে সে আরও ভাল নাম্বার আশা করেছিল। ভবিষ্যতে সে মেডিক্যালে পড়তে চায়। কিন্তু পরিবারের কাছে সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই। আমরা খুব গরীব। বাবা ভাজা বিক্রেতা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এমন অবস্থায় তার এই স্বপ্ন কতটা সার্থক হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা।

এদিকে ছেলের এই সাফল্যে রবির বাবা পরান সরকার বলেন, তার ভাল লাগছে, তবে তার স্বপ্ন অনেক কিছুই আছে তবে কতটা করতে পারব জানিনা। তবে কেউ সাহায্য করলে ভাল হয় বলে তিনি জানান।

এই বিষয়ে রবির মা টুলটুল দেবী খুশি। তবে বেশ দুঃখের সঙ্গে জানান, তার খুব ভাল লাগছে। তবে আজকাল টাকায় সব। পরের বাড়িতে কাজ করি। যার কারণে পরীক্ষা চলা কালীন তিনি একবারের জন্য ছেলের সাথে যেতে পারিনি।

এদিকে বালুরঘাট ললিত মোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ মুখার্জি বলেন, এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাদের স্কুলের ফলাফল বেশ ভাল। তবে, বিশেষ ভাবে গর্বিত রবি সরকারকে নিয়ে। কারন বাবা ভাজা বিক্রেতা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এর মধ্য থেকে আমরা সবাই বিদ্যাল্যের সকলে মিলে অর সাহায্য করেছি। তবে আগামীতে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে তারা একটি টিম হয়ে রবির সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে

https://www.youtube.com/embed/5myyE0uruSY